ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও শ্রেনীসহ সকলের জন্য শিশু-বান্ধব শিক্ষার পরিবেশ এবং শিক্ষা প্রতিষ্� ানে বুলিং/র‍্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা,২০২২ বাস্তবায়ন করা জরুরী।
শিশু অধিকার সপ্তাহ ০২ – ০৮ অক্টোবর ২০২৩ ও বিশ্ব শিক্ষক দিবস ০৫ অক্টোবর ২০২৩ উপলক্ষে “শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিরসনে কোয়ালিশন” এর পক্ষ থেকে আজ ৪ই অক্টোবর ২০২৩ তারিখে শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন নিরসনে শিক্ষকদের কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা বিষয়ক একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। কোয়ালিশনের সদস্য টইটম্বুর সংগ� নের কো-ফাউন্ডার হাসনাইন সবিহ্ নায়কের সঞ্চালনায় জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর অন্যতম প্রণেতা এবং এডুকেশন ওয়াচ বাংলাদেশের সদস্য, অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ “বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং শিক্ষা প্রতিষ্� ানে ও নিজগৃহে শিশুর নিরাপদ ও অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিতকরণ” প্রতিপাদ্যে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং “শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিরসনে আইনগত সুরক্ষা এবং বাস্তবায়নে করনীয় বিষয়ক উপস্থাপনা” প্রদান করেন এডভোকেট তাজুল ইসলাম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এবং উপদেষ্টা (এডভোকেসী এন্ড ক্যাপাসিটি বিল্ডিং)। সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এডভোকেট আমিরুল হক তুহিন, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, সাইদ আহমেদ, প্রধান নির্বাহী পরিচালক, আইআইডি, কে এম এনামুল হক, ক্যাপাসিটি সাপোর্ট এন্ড এডভোকেসী এডভাইজার, এশিয়া সাউথ প্যাসিফিক এসোসিয়েশন ফর ব্যাসিক এন্ড এডাল্ট এডুকেশন (এএসপিবিএই), এবং আবু সাঈদ খান, উপদেষ্টা সম্পাদক, দৈনিক সমকাল। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম এবং সভার উদ্দেশ্য ও কোয়ালিশনের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন ব্লাস্টের এডভোকেসি আ্যন্ড কমিউনিকেশন ডিরেক্টর মাহবুবা আক্তার।
অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ তার প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলেন জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ উদ্যোগ ও কর্মসূচীর আওতায় শিক্ষকতা পেশার উন্নয়নে ১৮ সদস্যের (High -Level Panel) উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল হতে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ আমাদের দেশে বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। এবং বলেন, মেয়ে শিক্ষার্থীর কণ্� রোধ এবং তাদের অবদমনের সব ফাঁক-ফোকর বন্ধ করতে বর্তমানে প্রচলিত লিঙ্গ ভিত্তিক প্রতিষ্� ান পরিচালনার বিপরীতে কো-এডুকেশন বা সহশিক্ষার ক্ষেত্র অবারিত করার কথা ভাবতে হবে। এছাড়াও, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২৩ জানুয়ারি ২০২৩ এ শিক্ষা প্রতিষ্� ানে বুলিং ও র‌্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা ২০২৩ এর প্রশংসা করে সকল শিক্ষা প্রতিষ্� ানে উক্ত নীতিমালা বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি তার সমাপণী বক্তব্যে বলেন,আমাদের কাছে যা আছে তা নিয়ে কীভাবে পরিবর্তন আনতে পারি তা নিয়ে কাজ করতে হবে। সর্বোপরি তিনি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের ভালো পরিবেশ নিশ্চিতের জন্য তিনি নীতিমালার বাস্তবায়ন করার আশা ব্যক্ত করেন।

ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বুলিং ও র‌্যগিং সংক্রান্ত আইন নিয়ে অনেকের অজ্ঞতা রয়েছে। মাদ্রাসার ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি আরও জটিল। সরকারী যে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে সেখানে শিক্ষকদের কি ভূমিকা রয়েছে তা সারাদেশে ছড়িয়ে দেবার জন্যে আজকের এই মতবিনিময় সভা।
ব্লাস্টের এডভোকেসি অ্যান্ড কমিউনিকেশন ডিরেক্টর মাহবুবা আক্তার শিক্ষকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ৩০ টি সংগ� ন নিয়ে আমাদের কোয়ালিশনটি গ� িত হয়েছে। শিশু আইনের ৭০ ধারা নিয়ে আমরা সরকারকে কিছু পরামর্শ প্রদান করেছি। বুলিংও র‌্যগিং নিয়ে দেশে অনেকে সংশয় রয়েছে। আমরা খুবই আনন্দিত যে এই বিষয়ে আমরা একটি পলিসি পেয়েছি ,আমাদের ভবিষ্যতের কাজ হল এই পলিসি বাস্তবায়নে কাজ করা।
এডভোকেট তাজুল ইসলাম শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি বন্ধে ব্লাস্ট কর্তৃক প্রস্তাবিত শিশু আইন,২০১৩ এর সংশোধন দ্রুত পাস করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। আবু সাইদ খান, উপদেষ্টা সম্পাদক, দৈনিক সমকাল, আমাদের শিক্ষকের মানবিক চরিত্র থাকা দরকার। তাদের লিঙ্গ নিরপেক্ষ, ধর্ম নিরপেক্ষ এবং জাতি নিরপেক্ষ হতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তন হওয়া দরকার এবং এখানে যে শ্রেণী বৈষম্য তা নিরসন করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যা জাপান, চীনে করা সম্ভব হয়েছে। ভালো শিক্ষক এবং ভালো পরিবেশ দরকার যেখানে একে অপর থেকে শিখবে । এজন্য দরকার একটি সামগ্রিক আন্দোলন যা শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক একসাথে হলেই সম্ভব হবে।
সাইদ আহমেদ, প্রধান নির্বাহী পরিচালক, আইআইডি, আমাদের একটি জরিপে দেখা গেছে যে, শিশু মার খাওয়ার ব্যপারটিকে খুব স্বাভাবিকভাবে দেখে। শিক্ষকের কাছেই একটা শিশু সবথেকে বেশি সময় পার করে, অন্যান্য দেশে শিক্ষকরাই শিক্ষার্থীদের শিষ্টাচার শেখান। শিক্ষক যদি শিশুকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে সেক্ষেত্রে আমরা দেখতে পায় আইনের প্রয়োগ খুব একটা হয়না। শিক্ষক নিয়োগে মান রক্ষার ব্যপারেও আমরা অনেক পিছিয়ে আছি কারণ শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ কম। শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে একটি গবেষণায় দেখা গেল , শিশুর খারাপ ফলাফল হলে মৌখিক ও শারীরিক নির্যাতন করে এতে শিশুরা আরও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তার উদ্ভাবনী ক্ষমতা কমে যায়।বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট আমিনুল হক বলেন এই বিষয় নিয়ে আমার বহু দিনের কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। শিক্ষা প্রতিষ্� ানে বুলিং (Bullying)/র‍্যাগিং (Ragging) প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২২, জনস্বার্থ মামলা রায়ের ভিত্তিতে এটি করা হলেও মামলাটির রেফারেন্স তাতে উল্লেখ নেই। আইনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে কেবল শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ হবে বলে আমি মনে করি না। ভালো শিক্ষকেরা বেশিদিন তাদের পেশায় থাকতে চায় না । ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দুটি রায় এসেছে কিন্তু এরপরেও সুদূরপ্রসারী কোন পরিবর্তন হয়নি। তবে সাংস্কৃতিক-ভাবে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে ।

কে এম এনামুল হক, ক্যাপাসিটি সাপোর্ট এন্ড এডভোকেসী এডভাইজার, এশিয়া সাউথ প্যাসিফিক এসোসিয়েশন ফর ব্যাসিক এন্ড এডাল্ট এডুকেশন (এএসপিবিএই), শিশুর প্রতি বুলিং ও র‌্যগিং নীতিমালাটি আমাদের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে। সরকারের শিশুর জন্য হট-লাইন নাম্বার আছে ১০৯৮, ৯৯৯, কিন্ত শিশুরা কতটা এই বিষয় সম্পর্কে জানে তা আমাদের তেমন জানা নেই। ইউনেস্কো শিক্ষক গাইডিং প্রিন্সিপাল রয়েছে যা আমাদের দেশে অনুসরণ করা হয় না। শিশুদের প্রতি সহিংসতা নিরসন করতে আমাদের কোয়ালিশনকে শক্তিশালী করা, পলিসি পর্যায়ে সরকারের সাথে একযোগে কাজ করা এবং তরুণ শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।
শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিরসনে দীর্ঘদিন থেকে কোয়ালিশন আইনগত সংস্কারসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কোয়ালিশন এর উক্ত কাজের ধারাবাহিকতায় আইন ও নীতি, শিশু অধিকার, শিক্ষা ও সমাজ ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা করে ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, জাতি ইত্যাদি নির্বিশেষে সকল ক্ষেত্রে সকল শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিরসনে কোয়ালিশনের পক্ষ হতে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন-
ফারজানা ফাতেমা, ম্যানেজার এডভোকেসি, ব্লাস্ট
farjana@cakhuy.com

হাসনাইন সবিহ্ নায়ক
সদস্য, শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিরসনে কোয়ালিশন
+৮৮০১৭১১৭৮৬৪৫৪

মুশফিকুর রহমান মারুফ
এডভোকেসি এন্ড কমিউনিকেশন অফিসার, ব্লাস্ট
+৮৮০১৫৫২৩২৪৩৭৬