HUMAN RIGHTS FORUM BANGLADESH (HRFB)
সংবাদ বিবৃতি
[ঢাকা, ২৭ জুলাই ২০২৪] কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, আহত হয়েছেন সহস্রাধিক, যাদের এমনকি চক্ষু ও অন্যান্য অঙ্গহানীর আশংকা রয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় হামলা করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করা হয়েছে। ফোরাম এ সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। একইসাথে, শিক্ষার্থীদের কোনরূপ হয়রানি না করে সহিংসতার সাথে জড়িতদের সুষ্� ু ও নিরপেক্ষ তদন্তসাপেক্ষে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে।জানা গেছে, গত ২৬ জুলাই, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, নাহিদ ইসলাম ও আবু বাকের মজুমদারকে বিকেলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থা থেকে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ও� ার পর রাতে গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে “নিরাপত্তাজনিত কারণে” তাদের হেফাজতে নেয়া হয়েছে। ইতোপূর্বে, গত ১৯ জুলাই গভীর রাতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কারী নাহিদ ইসলামকে বন্ধুর বাসা থেকে সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পর রাস্তায় ফেলে যাওয়ার অভিযোগ উ� েছিলো। হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের সময়ে সময়ে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ও� ায় গভীর উদ্বেগ
প্রকাশ করছে এবং এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্যের দাবি রাখছে। এমন ঘটনা সাধারণ শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবারের মধ্যে নিঃসন্দেহে ভীতির সঞ্চার করছে। এভাবে নির্বিচারে আটক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ সমূহ যথাক্রমে ২৭ (আইনের দৃষ্টিতে সমতা) এবং ৩১ অনুচ্ছেদ; (আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তাই, ফোরাম নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারসহ এ আন্দোলনের সকল সমন্বয়কারীদের মুক্তি, নিরাপত্তার দাবি জানাচ্ছে, এবং তাদের সাদা পোশাকে তুলে নেয়া, ভীতি প্রদর্শন ও যেকোনো ধরণের অবৈধ বল প্রয়োগ থেকে বিরত থাকার আহবান জানাচ্ছে। সংবিধানের ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে যে কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না কিংবা নিষ্� ুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাবে না কিংবা কাহারও সহিত অনুরূপ ব্যবহার করা যাবে না। ফোরাম, বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও রিমান্ড বিষয়ক ২০১৬ সালের মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুসরণ করার দাবি জানাচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা কোন ধরণের সহিংসতা বা নাশকতার সাথে জড়িত ছিলেন না- বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর বারবার প্রকাশ্য এধরণের বিবৃতির সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এরূপ আচরণ সঙ্গতিপূর্ণ নয় বরং সংবিধান স্বীকৃত নাগরিকের মত প্রকাশের অধিকার ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার চর্চার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক এই ধরনের কর্মকাণ্ড তাদের ক্ষমতার অপপ্রয়োগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে যা তাদের পেশাগত শুদ্ধাচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সর্বোপরি, এটি বাংলাদেশের জাতীয় আইন ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের সাথে সাংঘর্ষিক যা আইনের শাসনের প্রতি জনগণের অনাস্থা তৈরি করবে।
ফোরাম সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এবং তাদের কোনোভাবে যেন হয়রানি করা না হয় সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার আহবান জানাচ্ছে। একইসাথে, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিপূরণ, তাদের পুনর্বাসন ও প্রতিবন্ধিতায় আক্রন্ত হওয়া বন্ধে যথাযথ চিকিৎসার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে। সর্বোপরি, সহিংসতার ঘটনার সুষ্� ু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে।