সাম্প্রতিক সময়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশ হত্যা মামলায় ১৭ বছরের কিশোরকে গ্রেফতার ও ৭ দিনের রিমান্ড প্রদানের ঘটনায় শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিরসনে কোয়ালিশন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। দৈনিক পত্রিকা ও সামাজিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ হতে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ী এলাকায় এক পুলিশ সদস্যকে মেরে ঝুলিয়ে রাখার মামলায় আসামি একজন কিশোর এর বয়স ১৯ বছর দেখানো হয়েছে কিন্তু জন্ম নিবন্ধন অনুসারে তার জন্ম ২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল অর্থাৎ ১৭ বছর। সে এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকার শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০২৪ সালে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। গত ২৭ জুলাই ২০২৪ তারিখ ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকে হাজির করা হলে ৭ দিনের রিমান্ড আদেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি আরো কিছু শিশু – কিশোর আটক ও গ্রেফতারের ঘটনার সংবাদ সংবাদ পত্রে প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখ্য যে, কোয়ালিশনের সচিবালয় ব্লাস্ট এর পক্ষ হতে গ্রেফতার ও রিমান্ড বিষয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের নির্দেশনা মেনে চলার এবং আইনের সংস্পর্শে আসা প্রত্যেক শিশুর প্রতি শিশু আইন ২০১৩, মতে আচরণ করার অনুরোধ জানিয়ে একটি চি� ি আজ ২৮ জুলাই ২০২৪ তারিখ মাননীয় মহাপরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
কোন শিশুকে এ ধরনের আটক ও রিমান্ডে নেয়ার ঘটনা কোন নাগরিককের বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত ২৭, ৩১ ও ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদে বর্ণিত সাংবিধানিক অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বিশেষভাবে বাংলাদেশের সংবিধানে ৩৫(৫) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে নিষ্� ুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দন্ড দেয়া যাইবে না। শিশু আইন ২০১৩ এর ৭০ ধারা অনুযায়ী শিশুদের প্রতি শারীরিক ও মানসিক নিষ্� ুর আচরন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পাশাপাশি, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সমূহের অধীনে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও রিমান্ড বিষয়ক ২০১৬ সালের মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে। একইসাথে, শিশু আইন ২০১৩ এর ৭০ ধারা অনুযায়ী শিশুদের প্রতি শারীরিক ও মানসিক আচরন শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
গত ১৩ই জানুয়ারি ২০১১ তারিখ মানবাধিকার সংগ� ন ব্লাস্ট এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে দায়ের করা রিট এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এর মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত যুগান্তকারী রায় ৯ আগস্ট ২০১০ তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক শিক্ষা প্রতিষ্� ানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি রহিত করার বিষয়ে জারীকৃত পরিপত্র এবং ২১ শে এপ্রিল ২০১১ তারিখে সরকার কর্তৃক শিক্ষা প্রতিষ্� ানে ছাত্র ছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি রহিত কর্তৃক জারীকৃত নীতিমালা ২০১১ অনুযায়ী শিশুদের প্রতি যেকোন ধরনের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি প্রদান বেআইনি। এছাড়া শিশু অধিকার সনদের অনুচ্ছেদ-২০ এ বলা হয়েছে, “কোনো শিশু সাময়িক কিংবা স্থায়ীভাবে তার পারিবারিক পরিবেশের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলে কিংবা সর্বোত্তম স্বার্থ বিবেচনায় ঐ পরিবেশে তাকে রাখা সমীচীন না হলে সে রাষ্ট্রের কাছ থেকে বিশেষ সুরক্ষা ও সহযোগিতা পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে”।
এমতাবস্থায় উপরোক্ত ঘটনায় শিশুদের গ্রেফতার ও রিমান্ড বিষয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের নির্দেশনা মেনে চলার এবং আইনের সংস্পর্শে আসা প্রত্যেক শিশুর প্রতি শিশু আইন ২০১৩, মতে আচরণ করার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছে কোয়ালশিন।
বার্তা প্রেরক:
শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিরোসনে কোয়ালশিন এর সচিবালয়ের পক্ষে
কমিউনিকেশন বিভাগ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)
ই-মেইল: communication@cakhuy.com